কোটালীপাড়ায় ৩২১ টি মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
কে এম সাইফুর রহমান নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চারিদিকে চলছে সাজসজ্জা আর উৎসবের আমেজ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর কোটালীপাড়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ৩২১ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজার সূচনা হলেও মহালয়া সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা করে ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুর্গোৎসবের মূল পূজা শুরু হবে। আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসবের সমাপ্ত হবে।
এবছর উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এই ইউনিয়নে মন্ডপের সংখ্যা ৭৭ টি। এছাড়া সাদুল্লাপুর ৫০ টি, রামশীল ৫৭ টি, বান্ধাবাড়ি ৯ টি, রাধাগঞ্জ ২৮ টি, কুশলা ১২ টি, হিরণ ১৪ টি, আমতলী ১০ টি, শুয়াগ্রাম ১৪ টি, পিঞ্জুরী ১৪ টি, কান্দি ইউনিয়নে ২০ টি ও পৌরসভায় ১৬ টি মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি।
সরেজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পূজা মন্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।
বুধবার দুপুরে উপজেলার তারাশী রায় বাড়ি সার্বজনীন দুর্গামন্দির, ঘাঘর বাজার সার্বজনীন দুর্গামন্দির, পারকোনা সার্বজনীন দুর্গামন্দির, দেবগ্রাম সার্বজনীন দুর্গামন্দির ও রাজাপুর হালদার বাড়ী দুর্গূামন্দিরে দেখা যায়, কোন পূজা মন্ডপের মাটির কাজে শেষ হয়ে রংয়ের কাজ চলছে। কোনটার আবার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। আবার কোন মন্ডপে মাটির কাজ শেষের দিকে।
রাজাপুর হালদার বাড়ী দুর্গূামন্দির বসে কথা হয় প্রতিমা তৈরীর কারিগর জয়দেব পালের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর ১০ টা মন্দিরে তিনি দুর্গাপ্রতিমা তৈরীর কাজ করছি। দিনরাত এক প্রকার নির্ঘুম থেকে কাজ করতে হচ্ছে। ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরীর কাজ নিয়োজিত আছি। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বোধনের আগেই সকল মন্ডপের সকল কাজ সম্পন্ন হবে।
তারাশী রায় বাড়ি সার্বজনীন দূর্গামন্দিরের সভাপতি সুজিত রায় বলেন, প্রতিবছরই আমাদের এখানে জাকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবারও এর ব্যতয় হবে না। তবে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত সরঞ্জাধির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গতবারের চেয়ে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকার ভেদে মন্ডপ প্রতি ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা মজুরী নিয়ে থাকে কারিগররা। তাছাড়াও এখন প্রতিমার পোশাক পরিছদ যেমন জর্জেটের শাড়ী, হরেক রকমের পুতি, চুমকি ও চুড়ি,জরি কাজের লেন্স, ডাইমন্ড পুতি, গোল্ড চুমকি, সিটি গোল্ডের গহনা এ ধরনের সাজসাজ্জা কিনে আনতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লেগে যায়। কিনতে হয় খঁড়ি, মাটি আর রং সহ নানা উপকরণ। সবমিলিয়ে এবছর এক একটি মন্ডপের খরচ ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পড়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে পুজা উদযাপন পরিষদের কোটালীপাড়া শাখার সভাপতি অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো বলে আশা করছি।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে উপজেলার সকল মন্ডপগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলাব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ বছর শারদীয় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে আনসার সদস্যের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা থাকবে। পূজা উপলক্ষে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা বা আইন শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে তার জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ বছর উপজেলার ৩২১ টি মন্ডপ দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আশারাখি প্রতিবছরের মতো এবছরও এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। প্রতিটি মন্ডপে নিজস্ব ব্যবস্থায় সিসি ক্যামেরা থাকবে বলে মন্ডপ কতৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। সকল দুর্গামন্ডপ কতৃপক্ষসহ আইনশৃংখলা বাহিনী ও সুধীজনদের নিয়ে ইতোমধ্যে দুর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন হয়েছে। দুর্গাপূজাকে আরো উৎসবমুখর করার লক্ষে প্রতিটি ইউনিয়নে শেষ্ঠ মন্ডপ নির্বাচন করে পুরস্কার দেওয়া হবে। তাছাড়া প্রতি মন্ডপের অনুকূলে সরকারি ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply