অসহায় জীবন যাপন করছে যুবলীগ নেতা লিটনের বাবা-মা, সরকারিভাবে ঘর নির্মাণের দাবি
আকাশ আহম্মেদ সোহেল, মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি:
যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী মুন্সীর ছেলে। যেখানেই আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিল হতো সেখানেই ছিল তার অবস্থান। সে ছিল দলের নিবেদিত কর্মী। আর তার টানেই লিটন ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিল। সেদিন বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে তিনি নিহত হয়। সেই নিহত লিটন মুন্সীর পরিবারে শোকের ছায়া এখনও কাটেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ওই পরিবারে কান্নার পাশাপাশি এখন কিছুটা হলেও আনন্দ বইছে। কিন্তু ভালো নেই লিটনের বাবা-মা। গত ৪ বছর যাবৎ কেউই তাদের খবর নেয়নি। এখন অসহায় জীবন যাপন করছেন তারা। পুরোনো ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। তাই গ্রামের বাড়ীতে সরকারিভাবে একটি ঘর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন লিটনের বাবা-মা।
বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পরিবার কেমন আছেন জানার জন্য সোমবার রাজৈরের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের নিহত যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সীর বাড়ি গেলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। ১৯ বছর পার হলেও লিটনের বাবা-মায়ের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। জানাযায় লিটনের স্ত্রী মাফিয়া বেগম লিটন মারা যাওয়ার ৩ বছর পরই আবার প্রবাসী এক যুবককে বিয়ে করে শশুর বাড়ীতে থাকেন। সরকারী সুযোগ-সুবিধা পেয়ে একমাত্র মেয়ে মিথিলা মোটামুটি ভালই আছে। এ সময় লিটন মুন্সীর মা আছিয়া বেগম, বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার বাবা (লিটন মুন্সী) বলেছিল পুরোনো ঘর মেরামত করার দরকার নেই। আমি এখানে বিল্ডিং দেবো। কিন্তু সেটা আর হয় নাই। পুরোনো ঘরেই আমরা থাকি। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের গ্রামের বাড়ীতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালভাবে থাকতে পারবো। আমরা দুজনেই অসুস্থ। প্রতিমাসে আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এসব টাকা পাব কোথায়? তিনি আরও জানান, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে লিটনের মেয়ে মিথিলার নামে ঢাকায় একটি ফ্লাট বাড়ী এবং ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিমাসে তার খরচ বাবদ ৫ হাজার করে টাকা দেন। মিথিলা মাদারীপুর থাকে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ফোন করে।
লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী জানান, ‘আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? সরকারীভাবে ৫ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। চিকিৎসা করতে সে টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন আমি মাসে ৩ হাজার টাকা করে সরকারী ভাতা পাই। এতে আমাদের সংসার চলেনা। এ সময় তিনি এই গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তির রায় কার্যকর করার দাবি জানান।
নিহত লিটন মুন্সীর একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেন, “২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যখন আমার বাবা মারা যান তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। বাবা কি জিনিস তা বুঝতে পারিনি। বাবার আদর পাওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছি। হামলার ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হলেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
মিথিলার মা মাফিয়া বেগম জানান, মিথিলা এখন মাদারীপুর সরকারী কলেজ মানবিক শাখা থেকে এবার এইচএসসি দিচ্ছে। যোগ্য হলে তার একটি চাকুরীর ব্যবস্থাসহ গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তির রায় কার্যকর করার দাবি জানাই।
গ্রেনেড হামলায় অন্যদের মধ্যে নিহত সুফিয়া বেগমের বাড়ি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামে। ওই দিন মহিলা নেত্রীদের সাথে প্রথম সারিতেই ছিলেন সুফিয়া বেগম। চঞ্চলা ও উদ্যমী এই সুফিয়া স্ব-পরিবারে ঢাকায় থাকতেন। নিহত হবার পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
Leave a Reply