জাকির হোসেন বোয়ালমারী (ফরিদপুর)থেকেঃ দৈত শাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি স্কুলের চেইন অব কমান্ড বা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা। দুই প্রধান শিক্ষকের কর্তৃত্বের লড়াইয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা যেমন মাসুল গুনছে তেমনি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া সহ তলানিতে ঠেকছে প্রতিষ্ঠান মান-মর্যাদা। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী,অভিভাবক সহ সচেতন এলাকাবাসী। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়,বোয়ালমারী জর্জ একাডেমিতে বর্তমানে দুই প্রধান শিক্ষকের রাজত্ব চলছে। এদের একজন হলেন বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম এবং আরেকজন হলেন একই ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আজিজ। এই দুই শিক্ষকের কর্তৃত্বের ঠান্ডা লড়াই এখন তুঙ্গে। ফলে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একই বিষয়ে পাল্টা-পাল্টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরস্পর বিরোধী নোটিশ-বিজ্ঞপ্তি জারি,পৃথক-পৃথক ভাবে সরকারি কর্মসূচি পালন সহ নানাবিধ অরাজকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম যেটাকে বলেন কালা,বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ নিজের একক সিদ্ধান্তে সেটাকে বলেন সাদা। আব্দুল আজিজ না সিরাজুল ইসলাম কার আদেশ মানবেন অধস্তনরা,সেটা নিয়ে বিপাকে ভুক্তভোগীরা। কোন প্রধানের সাক্ষরে বেতন-ভাতার টাকা উঠবে সেটা নিশ্চিত না হওয়ায় টানা তিন মাস বেতন পাননা প্রতিষ্ঠানের ৩৫ শিক্ষক-কর্মচারী। ফলে পরিবার নিয়ে দূর্দশায় পতিত হয়েছেন তারা। এর আগে বিদ্যালয়ের অভ্যান্তরিন এক পরিক্ষায় পাল্টাপাল্টি প্রশ্নপত্র দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যা একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অত্যান্ত খারাপ নজীর স্থাপন করে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষের এস,এস,সি পরিক্ষার ফরম পূরণ কার্যক্রম নিয়েও বিবাদে জড়ান দুই পক্ষ। ম্যানেজিং কমিটি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম ২ নভেম্বর থেকে এ কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়ে নোটিশ জারি করলেও বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ তার নিজের ও স্কুলের ফেসবুক পেইজে নোটিশ প্রকাশ করে ৩০ অক্টোবর থেকে ফরম পূরণের টাকা নেওয়া শুরু করেন। তিনি অফিস সহকারীর মাধ্যমে ৩৭ শিক্ষার্থীর টাকা নেওয়ার পর ম্যানেজিং কমিটির চাপে তা বন্ধ করতে বাধ্য হন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে অফিস সহকারী মোঃ জালাল উদ্দীন বলেন,শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত আর পিটিশন বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আব্দুল আজিজই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার নির্দেশেই ফরম পূরণের টাকা নিয়ে তার হাতে বুঝে দিয়েছি। আরেক পক্ষ নোটিশ দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। তাই এখন চুপচাপ আছি। স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক এস,এম ইউনুস আলী বলেন,দুই প্রধান শিক্ষকের চাপে আমরা চিরে-চেপ্টা। কাকে মানবো কার কথা শুনবো বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক জটিলতায় তিন মাস বেতন বন্ধ। কবে পাবো তাও নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে আছি। তবে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজের বরখাস্তের বিষয়ে সরকারের আর পিটিশন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন। দৈত শাসন সহ বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির অন্যতম সদস্য মোঃ ইকবাল হুসাইন বলেন,ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বচরণ সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জর্জ একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল আজিজকে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক এবং ১৮ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভাবে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তিনি বরখাস্তাদেশ প্রত্যাখান করে গায়ের জোরে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার, কার্যালয় দখল করে রেখেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে কার্যালয়ে সব সময় তালা ঝুলিয়ে রাখেন। মাঝে-মধ্যেই অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও অনুসারী শিক্ষক-কর্মচারীদের দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে যান। ইকবাল বলেন,বরখাস্ত হওয়া একজন প্রধান শিক্ষক কিভাবে স্কুলের কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেন তা আমার বোধগম্য নয়। ম্যানেজিং কমিটির আরেক সদস্য মোঃ ফিরোজ আহমেদ বলেন,সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে স্কুলে কর্তৃত্ব খাটাচ্ছেন। পেশির জোরে স্কুলের খাতাপত্র আটকে রেখেছেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি ও অপরাজনীতির মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছন। বেআইনি ভাবে প্রতিষ্ঠানের ফেইসবুক পেইজ নিয়ন্ত্রণ এবং সেটির অপব্যবহার করছেন। অন্যায় ভাবে ফরম পূরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের পকেটে রেখেছেন। আমরা এ সবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন,স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি সুনির্দিষ্ট কারণে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আবদুল আজিজ সাহেবকে বরখাস্ত করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী আমিই এখন বৈধ প্রধান শিক্ষক। কিন্তু আবদুল আজিজ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্কুল ত্যাগ না করে ঝামেলা বাধাচ্ছেন। এ বিষয়ে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন,ম্যানেজিং কমিটি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ অবৈধ ও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আমাকে বরখাস্ত করেছেন। পূর্বআক্রশ বশত নেয়া এ অন্যায় পদক্ষেপ আমি মানিনা। এ বিষয়ে সরকারের আর পিটিশন বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত আমিই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যথা নিয়মে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি। এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোঃ কামরুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন,আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম,দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠায় ম্যানেজিং কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তাকে বরখাস্ত করে। কিন্তু তিনি ম্যানেজিং কমিটির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে পেশির জোরে স্বপদে বহাল থেকে বেআইনী ভাবে স্কুলের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। আমরা আইনগত ভাবে বিষয়টি মোক
Leave a Reply