দাজ্জালের ফিতনা ও আধুনিক প্রযুক্তি (AI): কোরআন, হাদিস ও বাস্তব বিশ্লেষণ
মোঃ নাঈম হোসেন,জেলা প্রতিনিধি,চাঁদপুর:
ইসলামের দৃষ্টিতে দাজ্জালের ফিতনা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ এবং মারাত্মক ফিতনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে বারবার তাঁর উম্মতকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন। বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার — বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবটিক্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, ডিপফেক প্রযুক্তি — অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদ মনে করেন এগুলো দাজ্জালের ফিতনার হাতিয়ার হতে পারে।
এই বিশ্লেষণে আমরা বিষয়টি কোরআন, হাদিস এবং আধুনিক বাস্তবতার আলোকে ব্যাখ্যা করব।
দাজ্জালের পরিচয় ও তার ফিতনা
হাদিসে দাজ্জালের বর্ণনা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে যারাই জীবিত থাকবে, তারা অবশ্যই দাজ্জালকে দেখবে। সে এমন এক ফিতনা নিয়ে আসবে, যা পূর্বের কোনো ফিতনার তুলনায় কিছুই নয়।”
(সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭)
দাজ্জালের ফিতনার বৈশিষ্ট্য:
✅ ভয়ানক ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচার।
✅ নিজেকে খোদ বা আল্লাহর প্রতিনিধি দাবি করা।
✅ অদ্ভুত ক্ষমতা দেখানো — যেমন বৃষ্টি বর্ষণ, মৃত জীবিত করা ইত্যাদি।
✅ মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও ঈমান নষ্ট করা।
আধুনিক প্রযুক্তি ও দাজ্জালের ফিতনা:
বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য:
🔸 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে মানুষের মতো কথা বলা ও আচরণ।
🔸 ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে যেকোনো ব্যক্তির নামে মিথ্যা প্রচার।
🔸 রোবট ও হিউম্যানয়েড প্রযুক্তি দিয়ে বাস্তবের মতো মানুষ তৈরি।
🔸 ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও মেটাভার্সের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করা।
🔸 বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ।
ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতামত:
অনেক স্কলার মনে করেন, এসব প্রযুক্তি:
✔ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না হলে তা দাজ্জালের ফিতনার প্রস্তুতি হতে পারে।
✔ মানুষকে সত্য-মিথ্যার বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে।
✔ মানুষ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
কোরআনের দৃষ্টিকোণ
আয়াত:
“যদি তুমি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মানো, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা কেবল অনুমান করে এবং মিথ্যা বলে।”
(সূরা আল-আন’আম: ১১৬)
ব্যাখ্যা:
বিভ্রান্তি ছড়ানো, সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য হারিয়ে ফেলা — এগুলো দাজ্জালের ফিতনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আধুনিক প্রযুক্তি ভুলভাবে ব্যবহার করলে ঠিক এই বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সতর্কতা ও করণীয়
হাদিস:
“যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ রাখবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।”
(সহিহ মুসলিম: ৮০৯)
করণীয়:
✅ কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করা।
✅ প্রযুক্তির ভালো দিক ব্যবহার করা, খারাপ দিক থেকে দূরে থাকা।
✅ আলেমদের পরামর্শ অনুযায়ী ধর্মীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তি দুটোই রক্ষা করা।
ইসলাম কি প্রযুক্তির বিরোধিতা করে?
না, ইসলাম প্রযুক্তির বিরোধিতা করে না। বরং প্রযুক্তি যেন নৈতিক ও মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। যেমন:
“তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো।”
(সূরা আল-বাকারা: ১৪৮)
তাই:
🔹 AI বা প্রযুক্তি ভালো কাজে লাগানো উচিত।
🔹 খারাপ উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করলে তা ফিতনা হয়ে যায়।
🔹 ঈমান, সতর্কতা ও জ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তি বিপজ্জনক হতে পারে।
পরিশেষে:
➡ দাজ্জাল নিজে কোনো প্রযুক্তি নয়, তবে প্রযুক্তি হতে পারে তার বিভ্রান্তির হাতিয়ার।
➡ ইসলামি শিক্ষা, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করাই দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।
➡ সূরা কাহাফ, কোরআন অধ্যয়ন এবং ঈমানকে মজবুত রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ফিতনা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
প্রভাষক, আই সি টি
মো: মোবারক করিম খান
ফরিদগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ
Leave a Reply