মুকসুদপুরের সূর্যকান্ত জানকী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের বানিয়ারচরে সূর্যকান্ত জানকী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জনচন্দ্র বালার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী একই গ্রামের বাসুদেব মন্ডল।
ভুক্তভোগী বাসুদেব মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন গত ০৫/১১/২০১৭ ইং তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদের জন্য জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি। উক্ত পদের জন্য আমি একজন প্রার্থী।কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন এবং নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয় গত ২৭/০৪/ ২০১৮ ইং তারিখে উক্ত পদের জন্য সরকারি বীণাপাণি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় গোপালগঞ্জে আমি সহ সকল প্রার্থীগণ উপস্থিত হই। তখন নিয়োগ বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র করার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কলহ দেখিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করেন। পরে উক্ত পদে আমাকে নিয়োগ দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জনচন্দ্র বালা মহাশয় আমার নিজ বসতবাড়ি থেকে নিজ হাতে নগদ ৫ লক্ষ টাকা নেন এবং নিয়োগের দিন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বাবু সুবোধ মণ্ডলকে পাঠিয়ে আমার নিকট থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন।মোট চাকরির নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে আমার কাছ থেকে মোট ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন।চাকরির ব্যাপারে আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়ে গেলে এ যাবৎ প্রধান শিক্ষক আমাকে চাকরিও দিতে পারেননি আমার টাকাও ফেরত দেননি।
এরপর আমি প্রধান শিক্ষক রঞ্জন চন্দ্র বালার কাছে আমার চাকরির ব্যাপারে দেওয়া টাকা বারবার ফেরত চাইতে গেলে তিনি আমাকে হুমকি-ধমকি দেন। আমি নিরুপায় হয়ে আমাদের গ্রামের বিভিন্ন লোকেদেরকে জানাই কিন্তু তারা তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী লোকের ভয়ে কিছুই বলতে পারি নাই এমনকি তৎকালীন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক, সেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন।তখন আমি কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে স্কুলে উপস্থিত হয়ে সকল শিক্ষকদের সামনে তার কাছে টাকা ফেরত চাই তখন তিনি আমার কোন কথার কর্ণপাত করেন না। পুনরায় ৩ দিন পরে আবারো স্কুলে উপস্থিত হই তখন অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত নাই তখন আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করে বলি আমার ফোন তিনি ধরছেন না আপনারা দয়া করে আপনাদের একটা ফোন দিয়ে তাকে জানান যে আপনার পাওনাদার টাকার জন্য আবারো স্কুলে এসেছেন তখন একজন শিক্ষক তার ফোন দিয়ে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিলে তিনি বলেন তোমরা ওকে বেশি কথা বলে স্কুল থেকে বের করে দাও। তখন আমি কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে গত ০৪/০৯/২০২৫ ইং তারিখে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করি। ভুক্তভোগী বাসুদেব মন্ডল আরো বলেন আমার একটিমাত্র কন্যা সন্তান ছিলো নাম বর্ষা মন্ডল। সে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় আমাদের ছেড়ে ইহলোক থেকে পরলোকে চলে গেছে, আমি টাকার অভাবে আমার মেয়ের সুচিকিৎসা করাতে পারিনি।আমি এখন উপায়ান্তর না পেয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করি, আমার দুখিনী মা এবং আমার স্ত্রীকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জন চন্দ্র বালা আমার টাকাগুলো ফেরত দিত তাহলে আমার স্ত্রী ও দুখিনী মাকে নিয়ে আমি সুন্দরভাবে সংসার চালিয়ে যেতে পারতাম।
সূর্যকান্ত জানকী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাবু সুবোধ মন্ডল গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমাকে প্রধান শিক্ষক বাসুদেব মণ্ডলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আনতে বললে আমি তার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে প্রধান শিক্ষককের হাতে দেই, কিন্তু কোন পারপাসের টাকা বা কিসের টাকা সেটা আমি জানিনা।
ওই এলাকার বাসিন্দা বাবু সুরেশ মন্ডল বলেন, বাসুদেব মন্ডলের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক রঞ্জন চন্দ্র বালা
৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে নিয়েছেন এ বিষয়টা আমরা জানি কয়েকবার এলাকায় সালিশ করেছি কিন্তু আমরা তার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত টাকাগুলো ফেরত দেওয়াতে পারি নাই, কারণ তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জন চন্দ্র বালা একজন দুর্দান্ত চৌকস ব্যক্তি যার প্রভাব ও বুদ্ধির কাছে এলাকাবাসী সব সময় হেরে যান।তিনি আরো বলেন স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের অনিয়ম ও স্কুলের টাকা আত্মসাৎ এর কারণে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারণে ন্যায় বিচার তার গায়ে লাগে নাই।
এলাকাবাসী কপিল হাওলাদার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন আমরা এই প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জন চন্দ্র বালার অনেক কুকর্মের কথা জানি। তিনি স্কুলের বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের সাথে জড়িত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বাবু রঞ্জন চন্দ্র বালার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, আপনাদের কাছে যে তথ্য আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা নিউজ করতে পারেন আমার কোন বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
Leave a Reply