গোপালগঞ্জে গ্রাম আদালত কার্যক্রমের বার্ষিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত
কে এম সাইফুর রহমান,
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জ জেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত কার্যক্রমের বার্ষিক অগ্রগতি পর্যালোচনা ও করণীয় শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ ঘটিকায় গোপালগঞ্জ পৌর মিলনায়তনের সন্মেলন কক্ষে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ৩য় পর্যায় প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ইউএনডিপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আর্থিক ও কারিগতি সহযোগিতায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্মসচিব) মুহম্মদ কামরুজ্জামান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) ও গোপালগঞ্জ পৌর প্রশাসক (অঃ দাঃ) বিশ্বজিত কুমার পাল।
জেলা প্রশাসক তার আলোচনায় বলেন, আপনারা এখানে যার যার এলাকার জনপ্রতিনিধি তাই সাধারণ জনগনকে আপনাদের বিচারিক সুবিধা দিতে হবে কারন আপনার জনগনের সেবক। গ্রাম আদালত যেহেতু সর্বোচ্চ ৩,০০০০০/- তিন লক্ষ টাকা পর্যান্ত বিরোধ সমাধান করতে পারে তাই ছোট খাটো বিরোধ গুলো এই গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। গ্রাম আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না সে সকল মামলা আপনারা গ্রাম আদালতে মাধ্যমে নিষ্পত্তি করবেন না। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় বেশ কিছু ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম ভালো ভাবে চলছে আবার কিছু ইউনিয়নের কাজ ভালো না। তাই সকলকে ভালো কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করত হবে। সকলের উদ্দেশ্যে বলেন গ্রাম আদালতের মামলা গ্রহণ ও নিষ্পত্তির হার বাড়াতে হবে এবং গোপালগঞ্জ জেলা সব জেলার চেয়ে এগিয়ে থাকবে এই বিষয়ে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল তার আলোচনায় বলেন, গ্রাম আদালতে এখতিয়ার ভূক্ত মামলা অনেকেই সালিশ করে থাকেন তাই বেশ কিছু ইউনিয়নে মামলা গ্রহন ও নিষ্পত্তির হার কম। স্থানীয় বিচার ব্যবস্থায় এই গ্রাম আদালতের উপর সকলকেই গুরুত্ব দিতে হবে। যদি আপনারা সপ্তাহে ১ দিন এই আদালতের কাজ করেন তাহলে সাধারন মানুষের এই আদালতের উপর আস্থা বাড়বে। তিনি আরো বলেন আপনাদের ইউনিয়ন পরিষদে যে সকল সভা হয় সেখানে গ্রাম আদালতের উপর এজেন্ডা রাখবেন এমনকি ওয়ার্ড সভায় গ্রাম আদালতের তথ্য প্রচার করবেন। আপনাদের ইউনিয়নে যে সকল হিসাব সহকারী আছে এবং যেখানে হিসাব সহকারী নেই সেখানে ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গ্রাম আদালতের ডকুমেন্টেশনের কাজ করবে। গ্রাম আদালতে যে ৫টি রেজিস্টার আছে তা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারিহা তানজিন তার আলোচনায় বলেন, যে সকল ইউনিয়নে মামলা গ্রহণ ও নিষ্পত্তির হার বেশি সে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানদের কাছ থেকে ভালো ভাবে কাজ করার পরামর্শ নিয়ে অন্য ইউনিয়ন পরিষদ সমূহকে সেই অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দেন। গ্রাম আদালতের প্রচার প্রচারনা বাড়ানোর জন্য সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে পরামর্শ প্রদান করেন।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, সকল চেয়ারম্যান যাতে তার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কাজ সঠিক ভাবে করে যাতে উচ্চ আদালতের মামলার জট ৫০% কমে যায়। সাধারন জনগন যাতে বিচার পেতে হয়রানি না হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
বিগত ১ বছরের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন মোঃ আলিউল হাসানাত খান, ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার, এভিসিবি-৩ প্রকল্প। তিনি অবহিত করেন গোপালগঞ্জ জেলায় ৬৭ টি ইউনিয়ন পরিষদে বিগত জুলাই ২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যান্ত মোট মামলা দায়ের করা ৭৭১ টি এর মধ্যে উচ্চ আদালত থেকে ৮০ টি মামলা গ্রাম আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। জেলায় মোট ৬৯৭ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে যার মাধ্যমে ৯০,৬৮,৭২০/- টাকা আদায় করা হয়েছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি জনাব নজরুল ইসলাম, প্রকল্প সমন্বয়কারী তার আলোচনায় বলেন, গ্রাম আদালতের এই কাজটি স্থায়ী করণ করতে হবে। আর এরজন্য বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের ডেস্ক থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন জেলা ডিআরটি সদস্য এবং উপজেলা ইউআরটি সদস্যদের বেশি একটিভ থাকতে হবে। তারা তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গ্রাম আদালতের তথ্য শেয়ার করবেন যাতে সাধারন জনগন ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সম্পর্কে জানতে পারে। সভায় বিভিন্ন চেয়াম্যান গ্রাম আদালতে সফল করার বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তবনা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য বিগত ১ বছরে গ্রাম আদালতের মামলা গ্রহনে ১ম স্থান অধিকার করেছে কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়ন পরিষদ, ২য় স্থান অধিকার করেছে কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৩য় স্থান অধিকার করেছে কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ। ভালো কাজের অবদান স্বরুপ এই ৩ টি ইউনিয়ন পরিষদকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক দেওয়া হয়।
উক্ত সভা সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার এস এম আমিরুল মোস্তফা।
উল্লেখ্য সভায় গোপালগঞ্জ জেলার ০৫টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডিআরটি সদস্য এবং ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/প্যানেল চেয়ারম্যানগণ সহ মোট ৯০ জন অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply