জননী জন্মভূমিশ্চঃ
বেশদিন ধরে গোপালগঞ্জের অভিভাবক ও নেতৃবৃন্দ এলাকার লেখাপড়ার মান নিয়ে উদ্বেগ ও অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন। চারিদিক তাকিয়ে এমনি মনে হওয়া যৌক্তিক।
তাই শিক্ষার গুনগত মান ও ছাত্র ছাত্রীদের যোগ্যতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন হলো। আমার জেলায় সরকারি কলেজ এখন দশটি (১০)।
যেহেতু কলেজগুলো জনগনের টাকায় চলে এবং গুরুত্বপূর্ণ তাই সরকারি কলেজগুলোর HSC Result এ GPA5 প্রাপ্তির সংখ্যা দিয়ে আমরা এলাকার লেখাপড়ার গুনগত মান এবং ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে দেখার চেষ্টা করছি। এজন্যে কলেজগুলোর ২০২৩ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গত ১০ বছরের Result পর্যালোচনা করছি। পরে আরো কয়েকটা জেলার দুই একটা কলেজের Result পাশাপাশি দেখার চেষ্টা করছি।
গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে গত দশ বছরে (২০২৩-২০১৪) মোট GPA5 প্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৬০৯ জন, পরীক্ষার্থী ছিলো ২০,১০৬ জন। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ০৮ জন GPA5 পেয়েছে।
সাতপাড় সরকারি নজরুল কলেজে গত দশ বছরে ৩৮২৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩ জন (০.৮%) GPA5 পেয়েছে।
তবে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ এই চার বছরে এ কলেজ থেকে কেউ GPA5 পায়নি।
রামদিয়া শ্রীকৃষ্ণ কলেজে ৫১৭২ জনে ৪৬ জন (০.৮%) GPA5 পেয়েছে। তবে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে কেউ GPA5 পায়নি।
মুকসুদপুর সরকারি কলেজে ১২৪৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৩ জন (১.২%) GPA5 পেয়েছে। এখানেও ২০১৫ এবং ২০১৮ সালে কেউ পায়নি।
কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে ৭২৭৯ জনে ৫৭ জন (০.৭%) পেয়েছে। তবে ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কেউ GPA5 পায়নি।
সরকারি শেখ রাসেল কলেজ, কোটালীপাড়া থেকে ১৮৫৪ জনে ০৭ জন (০.৩%) GPA5 পেয়েছে গত দশ বছরে। তবে ২০১৫ থেকে ২০১৯ এই পাঁচ বছরে কেউ GPA5 পায়নি।
কোটালীপাড়া শেখ হাসিনা আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে ১৫৬১ জনে ১০জন (০.৬%) GPA5 পেয়েছে গত দশ বছরে। তবে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই ছয় বছরে কেউ GPA5 পায়নি।
সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ, টুঙ্গিপাড়া থেকে গত দশ বছরে ৬৯০৬ জনে ৫৮ জন (০.৮%) GPA5 পেয়েছে। তবে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৯ সাল, চার বছরে কেউ পায়নি।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, গোপালগঞ্জ থেকে ৭৬৫০ জনে ৩৪ জন (০.৪%) GPA5 পেয়েছে। তবে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ছয় বছরে কেউ GPA5 পায়নি।
শেখ হাসিনা সরকারি গার্লস হাইস্কুল এবং কলেজ, গোপালগঞ্জ থেকে গত ২০২৩ থেকে ২০২০ এই চার বছরে ৮০৪ জনে ০৪ জন (০.৫%) GPA5 পেয়েছে (২০১৪ সালে কেউ পায়নি)। বলা প্রয়োজন যে এই কলেজে গত ২০২০ সাল থেকে HSC পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
সব মিলিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার ১০টি সরকারি কলেজ থেকে গত ১০ বছরে (একটি চার বছর) মোট ৬৭,৬০৮ জন পরীক্ষার্থীর থেকে ২০১১ জন (২.৯৭%) GPA5 পেয়েছ ।
এবার অন্য জায়গায় চোখ দেই। বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে গত ১০ বছরে ১১০৪৮ জন পরীক্ষার্থী HSC পরীক্ষা দেয়। তাদের মধ্যে ৩২৪৪ জন GPA5 পায়। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন মেয়ের ভেতর ২৯.৩৬ জন GPA5 পেয়েছে।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে ৭২৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৬৪৭ জন (৩৬.২৬%) GPA5 পেয়েছে। বিষয়টা দাড়ালো গোপালগঞ্জের ১০ টা সরকারি কলেজের চেয়ে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে ১২৩৩ জন এবং খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে ৬৩৬ জন বেশি পেয়েছে GPA5। গোপালগঞ্জে ছেলেমেয়ে মিলিয়ে আর বরিশাল ও খুলনায় শুধু মেয়েরা আমাদের থেকে এগিয়ে।
এছাড়া বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে গত ১০ বছরে ১৫৩২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০,১০৭ জন (৬৫.৯৫%) GPA5 পেয়েছে।
বাগেরহাট সরকারি প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে ৭৮৪৭ জনে ১২৩৭ জন (১৫.৭৬%) GPA5 পেয়েছে।
খুলনা সরকারি এম এম কলেজ থেকে গত ১০ বছরে ১১০৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫১৩৭ জন (৪৬.৩৭%) GPA5 পেয়েছে।
আরো একটা ভয়ংকর অংক না দেখালে নয়। গোপালগঞ্জে সাকুল্যে ২০১১ জন GPA5 পেয়েছে ৬৭৬০৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে। শতকরা GPA5 প্রাপ্তির হিশেব করলে এই ২০১১ জন GPA5 পেতে বরিশাল মহিলা কলেজের প্রয়োজন ছিল ৬৮৪৯ জন পরীক্ষার্থীর, খুলনা মহিলা কলেজের প্রয়োজন ছিল ৫৫৪৫ জন, খুলনা সরকারি এম এম কলেজের প্রয়োজন ছিল ৪৩৩৭ জনের এবং বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রয়োজন ছিল ৩০৫০ জন পরীক্ষার্থীর। আর আমার গোপালগঞ্জের কলেজগুলোর লেগেছে ৬৭৬০৮ জন পরীক্ষার্থী।
অনেকের মতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য এর অন্যতম কারন। নাও হতে পারে, হতে পারে অন্য কোন কারন। তবু আমরা আয়নায় আরও একবার নিজেদের দেখি। কেমন দেখতে আমরা!!
ডাঃ অধীর কুমার দাস
বহুগ্রাম, গোপালগঞ্জ
Leave a Reply