বাবার কাছে যাওয়া হলো না সাব্বিরের, পরিবারে আহাজারি
আকাশ আহম্মেদ সোহেল, মাদারীপুর প্রতিনিধি:
দেড় বছর আগে ইতালি যায় বাবা। এতেই অনুপ্রাণিত হয় ছেলে। ইউরোপের দেশে বাবার সঙ্গে একত্রে কাজ করে পারিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরানোর আসায় লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে সাগরপথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের পশ্চিম কালাইমার গ্রামের মামুন আকনের ছেলে সাব্বির আকন (১৮)। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তার। ভূমধ্যসাগরে ট্রলার দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে সাব্বির। তার বাড়িতে চলছে শোকের মতম। গত মঙ্গলবার ইতালির দক্ষিণ উপকূলে এ ঘটনা ঘটে।
শুধু সাব্বিরই নয় মাদারীপুরের আরো দুইজন মারা গেছেন। তারা হলেন, শিবচর পৌরসভার খানকান্দি এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে আলী হাওলাদার ও আরেকজন শিবচর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে এখনো নাম ঠিকানা জানা যায়নি। তাদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় নিহতদের মরদেহগুলো দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী দুইটি নৌকা ডুবে ইতালির দক্ষিণ উপকূলে ১১ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জনই মাদারীপুরের বাসিন্দা। এ ঘটনায় ২৬ শিশুসহ এখনও ৬৪ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহত সাব্বির আকনের স্বজনরা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে ইতালি গিয়েছেন সাব্বিরের বাবা মামুন। পরে সাব্বিরকেও সাগরপথে ইতালি নেওয়ার জন্য দালালের সঙ্গে চুক্তি করে তার বাবা। তাছাড়া এই একই ভাবে সাব্বিরের অনেক বন্ধুরাও ইতালি গিয়েছে। এজন্য তারও আগ্রহ বাড়ে ইতালি যাওয়ার প্রতি। প্রায় তিন মাস আগে স্বপ্ন পূরণের আসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয় সাব্বির। মঙ্গলবার লিবিয়া হয়ে ইতালী যওয়ার উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গেলে দূর্ঘটনায় মাদারীপুর সদর উপজেলার সাব্বির আকন ও শিবচর উপজেলার আলী হাওলাদারসহ ৩ জন সহ মোট ১১ জন মারা যায়।
পরিবারের দাবী, নিহতরা ধার দেনা করে পরিবারের স্বচ্ছলতা আনার আশায় টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে ইতালী যাত্রা করে।
নিহত আলী হাওলাদারের স্ত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, ‘দেশে থাকালীন সময়ে ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাতো আলী। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে গিয়ে এভাবে মৃত্যু হবে মেনে নিতে পারছি না। পরিবারে ৬ বছরের এক ছেলে ও এক বছরের এক মেয়ে রয়েছে। এখন সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে।’
নিহত সাব্বিরের মা রহিমা বেগম জানান, ট্রলারডুবিতে আমার ছেলে সাব্বির মারা গেছে। আমি চাই সরকার যেন আমার ছেলের লাশ দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করে।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে লাশ আনার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোন সহযোগিতা চাওয়া হয় তাহলে মানবপাচার আইনের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply