বাংলাদেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ফলাফল উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) টুলসের প্রভাব
(ফরিদগঞ্জ,চাঁদপুর) প্রতিনিধিঃ
বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা (AI (Artificial Intelligence) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন প্রভাব ফেলছে, তেমনি শিক্ষা ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও ধীরে ধীরে AI টুলসের সাথে পরিচিত হচ্ছে এবং এসব টুলস শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ফলাফল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
AI টুলস বলতে বোঝায় এমন সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন, যা মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনা, বিশ্লেষণ এবং সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। যেমন, ChatGPT, Grammarly, Google Bard, Al ভিত্তিক অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি। এই টুলসের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা যে কোনো সময় প্রশ্নের উত্তর
পেতে, জটিল বিষয় সহজভাবে বুঝতে, লেখার ভুল সংশোধন করতে এবং বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক সহায়তা গ্রহণ করতে পারছে।
বাংলাদেশে কলেজ পর্যায়ে AI টুলসের ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। শহরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে বেশি সুযোগ পাচ্ছে। ChatGPT ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা পাচ্ছে, Grammarly-এর সাহায্যে ইংরেজি লেখার দক্ষতা বাড়াচ্ছে এবং AI-ভিত্তিক শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ বাড়ছে, ভুল কমছে এবং শিক্ষাগত ফলাফলে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
তবে AI টুলসের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চিন্তা-শক্তি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া গ্রাম-শহরের মধ্যে প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধার যে ব্যবধান রয়েছে, তা AI ব্যবহারে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। অনেক শিক্ষার্থী AI টুলসের সঠিক ব্যবহার জানে না, ফলে তারা এর প্রকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সঠিক দিকনির্দেশনা ও সচেতনতার মাধ্যমে AI টুলসের ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের AI টুলস ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও এসব টুল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গ্রামীণ এলাকায় প্রযুক্তি সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরি, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও AI টুলস ব্যবহারের সুযোগ পায়।
সবশেষে বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়,তবে তা বাংলাদেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে পারে। তবে এর অপব্যবহার রোধ এবং বৈষম্য কমানোর জন্য সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
প্রাবন্ধিক: মোঃ মোবারক করিম খাঁন
প্রভাষক,আইসিটি,ফরিদগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজ ফরিদগঞ্জ,চাঁদপুর।
Leave a Reply