সনোজ কুণ্ডুর গল্পগ্রন্থ ‘গণিকা ফেরানো দিন’
এবার একুশে বই মেলায় ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হলো সনোজ কুণ্ডুর গল্পগ্রন্থ ‘গণিকা ফেরানো দিন’। বইটির ভূমিকা লিখেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও নন্দিত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। লেখকের একাধিক উপন্যাস থাকলেও ‘গণিকা ফেরানো দিন’ তার প্রথম গল্পগ্রন্থ।
দেশভাগ, নকশাল আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সমাজের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে শাণিত হয়েছে লেখকের কলম। তাছাড়া মানুষের আবেগ-অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা, অভিঘাত, অন্তর্দাহ নিয়তিবাদী বিশ্বাস ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সমকালীন চিন্তা-চেতনা বিচিত্ররূপে উপস্থাপন করেছেন ভিন্ন ভিন্ন স্টাইলে।
গণিকা ফেরানো দিন নামকরণের গল্পটিতে লেখক কথক হিসেব যৌনকর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন- ফিরে এসো গণিকাগণ-গলির ল্যাম্পপোস্ট জানে তোমরা কতটা নিষ্পাপ। তোমার ফুলেও দেবীর অর্চনা হয়। তুমি অশুচি হলে দেশের কতশত নারীরা অন্ধকারে অশুচি।
লেখকের কলমে উচ্চারিত হয়েছে রাষ্ট্রের কিছু অনিয়ম। ‘বাহ কি অপূর্ব সমাজ ব্যবস্থা! নিজেদের মা-বোনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে আমরা অন্য পতিতাবৃত্তিকে স্বাগত জানাচ্ছি। সমাজপতিরাও গর্বের সাথে পতিতাদের নীরব সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র তাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তা না করে দিয়ে যাচ্ছে পতিতাবৃত্তির সনদ। এ সমাজ আজও পুরুষের চারণভূমি হলেও লেখক সেই পুরুষতন্ত্রের করিডোর ভেঙে নারীকে প্রতিষ্ঠিত করার ইংগিত দিয়েছেন। কখনো ছড়িয়ে দিয়েছেন সংগ্রামের বার্তা। গল্পগ্রন্থে উঠে এসেছে মানবমুক্তির স্লোগান। দেখিয়েছেন শোষিত মানুষের মুক্তির পথ।
কিছু গল্পে পরাবাস্তবতার আশ্রয় নিলেও মানুষের অবচেতন মনের অদৃশ্য চেতনাবোধকে শৈল্পিক রূপে উপস্থাপন করে পাঠকের মনে জাগিয়ে তুলেছেন অন্যরকম শিহরণ। প্রতিটি গল্পের ভাষা প্রবহমান নদীর মত গতিশীল। গতানুগতিক কাহিনীর চৌহদ্দি থেকে পাঠকের সামনে ভিন্ন কাহিনী তুলে ধরেছেন যা অনেকটাই বাস্তবতার নিরিখে সৃষ্টি। ‘গণিকা ফেরানো দিন’ গল্পগ্রন্থটি সাহিত্যের চিরকালের সম্পদ হয়ে থাকবে বলে ভীষণভাবে আশাবাদী।
Leave a Reply