গোপালগঞ্জে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা আলোচিত সেই ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহেল শেখের বদলি
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা আলোচিত ওয়ার্ডবয় সোহেল শেখ এর বদলির আদেশ হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ স্বাঃ অধি/প্রশা-২/৪র্থ শ্রেণী ৪৯/২০১৪ (অংশ -২)/৬০৩ নং স্বারক মূলে মোঃ সোহেল শেখ (নিজ বেতনে) জমাদ্দার/সর্দারকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল (সদর হাসপাতাল) হতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ বদলির আদেশ জারি করে।
অপরদিকে ওয়ার্ডবয় (নিজ বেতনে) জমাদ্দার সোহেল শেখ তার বদলির আদেশ ঠেকিয়ে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে থাকতে জোর তদবির করলেও সে সফল হয়নি। নিরুপায় হয়েই সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবেতিষ বিশ্বাসের নিকট থেকে থেকে রিলিজ অর্ডার নিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে ওয়ার্ডবয় সোহেল শেখ দীর্ঘদিন ধরে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে অর্থের বিনিময়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে আসছে। তার দেওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট সার্টিফিকেটে গোপালগঞ্জ জেলার অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থেকেছে। আবার তার ঠেকিয়ে দেওয়া সার্টিফিকেটের কারনে অনেক অপরাধী অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে সঠিক মেডিকেল সার্টিফিকেট না পেয়ে বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ।
এছাড়াও সোহেল শেখের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে জাল কাগজপত্র তৈরি করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত থাকাকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঘুষ দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ওয়ার্ডবয় থেকে জমাদ্দার/সর্দার পদে পদোন্নতি নিয়েছেন।
সোহেল শেখ ও মেডিকেল সার্টিফিকেটের বিষয় নিয়ে জেলা জুড়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা দীর্ঘদিনের। এবিষয়ে দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার, দৈনিক সমাজ সংবাদ, দৈনিক পথে প্রান্তরে, দি ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি, দি মুসলিম টাইমস, স্থানীয় দৈনিক যুগের সাথী ও ভোরের বাণী পত্রিকা সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও অজানা কারণে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উৎকোচের বিনিময়ে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট পরিবর্তন করার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা হ্যাপী বেগম দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে নড়েচড়ে বসে অভিযোগ পাওয়া সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হাসপাতালটিতে আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান শেষে দুদক গোপালগঞ্জ এর উপ-পরিচালক মশিউর রহমান ওয়ার্ডবয় সোহেল শেখ কর্তৃক সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পান বলে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে মামলা রুজু করার বিষয়েও সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন। অভিযানের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্য কারণে দুদকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সোহেল শেখের বিরুদ্ধে কোন মামলা রুজু হয়নি।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ডবয় সোহেল শেখ পুলিশ কেসের মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করে গোপালগঞ্জে বাড়ি ও ঢাকায় একাধিক ফ্লাট সহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহকর্মী ও একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। সে টাকার গরমে দেড় লাখ টাকা মূল্যের বিদেশী কুকুর ও ৮০ হাজার হতে ১লাখ টাকা মূল্যের কবুতর পালন করেন। সে পূর্বে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে ও বর্তমানে সুর পাল্টে বিএনপি- জামাত নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানাগেছে।
Leave a Reply