সামনেই কোরবানির ঈদ। যতদিন যাচ্ছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামারদের। নতুন চাপাটি, দা, ছুরি, বঠি তৈরি ও পুরাতনগুলো শান দিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে তারা। টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে কামারপট্টি। তবে বছরের মধ্যে এক মাস তাদের ব্যস্ততা বাড়লেও কমেছে আয়। এদিকে গত বছরের থেকে এই বছর সকল সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আশানুরূপ বিক্রি নিয়েও আশংকায় রয়েছেন তারা।
কোরবানি ঈদের এক মাস কামারদের ব্যস্ততা বাড়লেও বছরের ১১ মাস তাদের কোন কাজ থাকে না। এজন্য সারাবছর কামার পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। ঈদের এই সময়টাতে তারা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে থাকে। এই কর্মব্যস্ততা চলে ঈদেরদিন পর্যন্ত।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কামারপট্টির প্রতিটি দোকানে ৩/৪ জন করে লোক কাজ করছে। তীব্র গরম সহ্য করেও লোহা আগুনে পুড়িয়ে হ্যামার ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দা, চাপাটি, ছুরি ও বঠি তৈরি করে বিক্রির জন্য সামনেই সাজিয়ে রাখছে। কিন্তু ক্রেতাদের কোন ভিড় নেই।
কামারপট্টির দোকানিরা জানান, কাঠের কয়লা বিভিন্ন কারখানা ও খাবার হোটেল থেকে কিনে আনা হয়। লোহা ও কয়লার দাম বাড়ায় আমাদের লাভের সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে। এ বছর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আশানুরূপ বেচাকেনা হবে কিনা তা নিয়েও আশংকা রয়েছে।
কামার বিপ্লব জানান, সারাবছর তো তেমন কাজ থাকে না। ঈদের সময় হলে একটু বেচাকেনা বাড়ে। তাই চাপ বাড়ার আগেই চাপাটি, ছুরি, দা তৈরি করে রাখতেছি। অর্ডারের গুলো এক হাজার টাকা কেজি আর রেডিমেড গুলো ৮’শত টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এছাড়া ছুরি ৫০ থেকে ৪’শ টাকা দামের রয়েছে।
টেকেরহাট বাজারের কামারদের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় বালা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর চাপাটি, দা, বঠি, ছুরির দাম বেশি। যেটা ৬০০ টাকা কেজি ছিল সেইটা বর্তমানে ৮০০ টাকা কেজি এবং ৮০০ টাকারটা এক হাজার টাকা কেজি দাম হয়েছে। এখনো তেমন কাজ নাই। তবে প্রতি বছর ঈদের তিনদিন আগে থেকে চাপ বেড়ে যায়। এবারও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, আগামী ২৯ জুন বাংলাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালনের কথা রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আসায় প্রতি বছর ঈদ-উল-আযহা এর তৃতীয়দিন পর্যন্ত পশু কোরবানি করা হয়। তাই কোরবানির ঈদ উৎসব বলা হয়। এ দিনগুলোতে মুসলিম ধর্মের মানুষেরা সামর্থ অনুযায়ী গরু বা ছাগল কোরবানি করে থাকে। পরে নিয়ম অনুসারে কোরবানিকৃত পশুর গোস্তো তিন ভাগ করা হয়। এরমধ্যে দুই ভাগ গরিব, অসহায়, এতিম-মিস্কিন ও আত্মীয়দের মাঝে বিতরণ করা হয়। সারাদেশে একযোগে এই কোরবানির পশুর গোস্তো কাটাকাটির জন্য প্রয়োজনীয় চাপাটি, দা, বঠি, ছুরির চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এইগুলো নতুন তৈরি ও পুরাতন গুলো শান দেওয়ায় কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
Leave a Reply