শহিদুল ইসলাম শহিদ:
স্বপ্নপুরের উদ্যোগে ‘জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’- এই শ্লোগানে ব্যতিক্রমী আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানবিক উন্নয়নমূলক এই সংগঠন শুরু থেকেই মুকসুদপুরের সাংস্কৃতিক বিকাশে বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশনাসহ নানা রকম সৃজনশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ ই মে ২০২২, শুক্রবার ‘সৃজনশীলতার বিকাশ ও বাংলা সাহিত্যের কর্মশালা’- শিরোনামে মনোজ্ঞ সাহিত্য বিষয়ক কর্মশালা, সাহিত্য আলোচনা ও কবিতা পাঠের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় মুকসুদপুর সরকারি এসজে স্কুল অডিটোরিয়ামে। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন এবং তার জীবনসঙ্গী আনোয়ার হোসেন খান এই আয়োজনে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে আলোকিত করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে স্বপ্নপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ সিমান ক্রম- অধঃপতিত মূল্যবোধকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে মননশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য সকলকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান। সর্বজন শ্রদ্ধেয় সমাজ সংস্কারক, সরকারি ভাংগা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসায়েদ হোসেন ঢালী সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয় রোধে কলম যোদ্ধাদের একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন কবি, কথা সাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক চঞ্চল আশরাফ। তিনি ‘শিল্পকলায় কবিতা, কবিতার শিল্পকলা’- এই শিরোনামে তার চিত্তাকর্ষক এবং চিন্তাকর্ষক আলোচনা করেন। এ পর্বের দ্বিতীয় আলোচক প্রতিশ্রুতিশীল কথা সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান ‘কথা সাহিত্যের প্রস্তুতি’ বিষয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন। বাটিকামারী স্কুল ও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম পান্নু ‘স্বাধীনতা-উত্তর কবিতা’ শিরোনামে কবিতায় গণমানুষ, কবিতার দূর্বোধ্যতা, কাম্য সমাজ বিনির্মাণে গনমুখি কবিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোকপাত করেন। ‘শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব’ নিয়ে নান্দনিক আলোচনা করেন অন্যতম কবি, সংগঠক এবং নন্দিত ছোট কাগজ মগ্নপাঠের সম্পাদক আহমেদ শিপলু। এ পর্বের সর্বশেষ আলোচক মাদুলির সফল সম্পাদক ও সময়ের আলোচিত কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী ‘স্ব-কালের কবিতা’ নিয়ে আলোকপাত করেন।
প্রথম পর্বের শেষে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃতিসজ্জন আনোয়ার হোসেন খান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং সংগীতের অপরিহার্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রজন্মকে সৃজনশীল চর্চা এবং সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক একটি জাতি গঠনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি হাঙর নদী গ্রেনেড, যাপিত জীবন, ক্ষরণ, কাটাতারে প্রজাপতি, গায়ত্রী সন্ধ্যা’র মতো অসংখ্য কালজয়ী উপন্যাসের স্রষ্টা, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন তার দীর্ঘ বক্তব্যে সমাজ অর্থনীতি সংস্কৃতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করার জন্য সমবেত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে সাহিত্য-আলোচনা সাহিত্য-আড্ডা এবং কবিতাপাঠে অংশগ্রহণ করেন দেশের অন্যতম কবি পরিতোষ হালদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামরুজ্জামান মুক্তা, কবি এজাজ হাসান, সাংস্কৃতিক সংগঠক সাঈদ মাসুদ, আলোকচিত্রী ও আবৃত্তিশিল্পী এপোলো নওরোজ, কবি ফরিদ ছিফাত উল্লাহ, ঋজু রেজওয়ান, সমাজ সংস্কারক মাহমুদা হোসেন, কবি সালেহ রনক, স্বপঞ্জয় চৌধুরী, গৌরাঙ্গ রায়, সন্যাসি আরণ্যক, অনিক রহমান, তোফায়েল আহমেদ, মোস্তাক খান, জাকারিয়া মাসুম, ম. মিজান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফিরোজ খান, মুকসুদপুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তৌহিদুল হক বকুল, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক আমিরুজ্জামান ফারুক, এসজে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু সুনীল কুমার মন্ডল, মুকসুদপুর সংবাদের সম্পাদক এবং রাজনীতিবিদ হায়দার হোসেন, কবি খাইরুল বাকি শরিফ, কবি ইলা লিপি, সমাজকর্মী মোজাহিদ মহসিন ইমন, মুকসুদপুর ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব বাবু, সমাজকর্মী অসিউর রহমান প্রিন্সসহ অসংখ্য সাহিত্যপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্বপ্নপুরের সভাপতি মোঃআবুল কাশেম ও যৌথভাবে পরিচালনা করেন মাহমুদ সিমান ও স্বপ্নপুরের সংগঠক এইচএম শিশির।
Leave a Reply